ছায়াছন্দ প্রতিবেদক : দেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী সিঁথি সাহা গানে ভিন্নতার পাশাপাশি নিজের গাওয়া কিছু মৌলিক গান নিয়েও বেশ আলোচিত।তাই তো তিনি জনপ্রিয়তায় তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে সামনের কাতারে। সিঁথির গানের শ্রোতা – দর্শক আর ভক্তদের জন্য নতুন একটা খুশির খবর হলো – তারা তাদের প্রিয় শিল্পীকে টানা অর্ধযুগ পর আবার টিভি পর্দায় উপস্থাপক হিসেবে পাচ্ছেন। যদিও তিনি মূলত সংগীতশিল্পী হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। তবে এর আগে মাঝে মধ্যেই তাকে দেখা গেছে টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা হিসেবেও। কিন্তু সিঁথি সেটায় কখনোই নিয়মিত ছিলেন না। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও উপস্থাপিকা হিসেবে মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ একটি অনুষ্ঠানে দেখা মিলছে সিঁথির।
সিঁথি জানান, প্রতি শনিবার রাত ১১ টায় ‘সিঁথি’র অতিথি’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন তিনি। ধারাবাহিক এই অনুষ্ঠানে প্রতি পর্বে অতিথি হিসেবে থাকছেন একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। ওই অতিথি সিঁথির সঙ্গে আড্ডায় করোনাকালীন জীবনযাত্রা, গানের বাইরে ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবন এবং নতুন ভাবনার কথা বলবেন। আবার আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে দর্শক – ভক্তদের শোনাবেন প্রিয় কিছু গান।
মাছরাঙা টেলিভিশনের পর্দায় এ অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হয়েছে ১৮ জুলাই (শনিবার) থেকে। প্রথম পর্বের অতিথি ছিলেন বাপ্পা মজুমদার। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানটি টিভি দর্শকদের মাঝে আলোচিত হয়ে ওঠেছে। ঘরবন্দি সময়ে এমন একটি আয়োজন ও এর অভিজ্ঞতা নিয়ে ছায়াছন্দর সঙ্গে কথা বলেছেন সুন্দরী – সুরেলা কন্ঠের জনপ্রিয় গায়িকা সিঁথি সাহা। আগামীকাল প্রচারিতব্য দ্বিতীয় পর্বে সিঁথির অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়।
সিঁথির অতিথি অনুষ্ঠান সম্পর্কে সিঁথি শুরুতেই বলেন, এমন একটি অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা মূলত আমারই ছিল। আমার ভাবনা ছিল – এমন একটা আয়োজন করা গেলে বেশ ভালো হয়। মাছরাঙা টেলিভিশনের সহযোগিতায় আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠানটি শুরু করতে পেরেছি। প্রোডিউসার হিসেবে পেলাম সাইফুল ইসলামকে। গ্রন্থনা করছেন রিয়াজ শিমুল। আমার এই অনুষ্ঠানে দুই বাংলার সংগীতশিল্পীরাই থাকবেন। যিনি অতিথি হিসেবে থাকবেন, তার গান দিয়েই শুরু হবে সেদিনের আয়োজন। যেহেতু এটি রেকর্ডেড অনুষ্ঠান, তাই শ্রোতা – দর্শকদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই সাজানো হচ্ছে অনুষ্ঠানটি।
ছয় বছর পর আবার কেন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ? সিঁথির কাছে এমন প্রশ্নের অবতারণা করতেই তিনি বলেন, আসলে গান ছাড়া অন্য কোন কিছুই আমি পারি না। একটা সময় অভিনয় এবং উপস্থাপনা করেছিলাম। কিন্তু ওই কাজ আমার কাছে উপভোগ্য ছিল না। টিভি চ্যানেলগুলোতে বেশ কয়েকটা লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। কিন্তু ভালো লাগেনি। বুঝতে পারলাম – এই কাজ আসলে আমার জন্য নয়। এক সময় ভাবলাম – যদি কিছু করতেই হয়, তবে সেটা হতে হবে আমার ভাবনার মতোই, আমি যেভাবে করতে চাই। সিঁথির অতিথি আমার প্রত্যাশা মতোই হচ্ছে। আমি এটাকে আমার উপস্থাপনা বলবো না। কারণ, আমি গানের মানুষ। গানই আমার জীবন, গানেই আমার বসবাস। এই অনুষ্ঠানে আমি শুধু গান নিয়েই কথা বলবো, নিজেও গাইব। তাই এক অন্যরকম ভালো লাগা থেকেই সিঁথির অতিথি আমি উপস্থাপনা করছি।
ঘরে বসেই এমন একটি আয়োজন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ উল্লেখ করে সিঁথি বলেন, প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমি মাছরাঙার স্টুডিওতে বসে অনুষ্ঠানটা করবো। পরে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ায় সেই পরিকল্পনাটা থেকে সরে আসতে হয়। পরে আমার বাসাতেই সেট বানানো হয়েছে। যদিও এতে বেশ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে সেটাকে আমরা ওভারকামের চেষ্টা করেছি। এই করোনার নতুন সময়কে মেনে নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। অনুষ্ঠান প্রচারের পর যদি মনে হয় আরও কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার প্রয়োজন হয়, সেটাও আমরা করবো। আসলেই এই আয়োজনে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে – দর্শকদের ভিন্ন কিছু, নতুন কিছু উপহার দেওয়ার। পুরো কাজটাই একটা টীমওয়ার্ক হওয়ায় এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ভালো কিছুই হচ্ছে।
সিঁথির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল – সিঁথির প্রথম অতিথি হিসেবে বাপ্পা মজুমদারকেই কেন বেছে নেওয়া ? একগাল হেসে তরুণ প্রজন্মের এই গুণী শিল্পী বলেন, বাপ্পাদার সঙ্গে এখনও আমার গান করার সৌভাগ্য হয়নি। আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই উনি আমার আইডল। স্কুল জীবন থেকেই থেকেই আমি তার গানের ভীষণ ভক্ত। বলতে পারেন, এই জন্যেই সিঁথির অতিথি হিসেবে প্রথমেই বাপ্পাদা কে আমন্ত্রণ জানানো। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাপ্পা মজুমদার সবার প্রিয় একজন শিল্পী। সবমহলেই জনপ্রিয় একজন আন্তরিক মানুষ। তাই আমাদের পরিকল্পনাতেই ছিল যে, প্রথম পর্বে আমরা এমন একজন শিল্পীকে অতিথি করবো, যিনি সবার কাছেই সমানভাবে গ্রহণযোগ্য।
কথামালার শেষ প্রান্তে এসে সিঁথি জানান, মাঝখানে বেশ কয়েকবছর তিনি দেশের বাইরে ছিলেন বলে গানের জগতে একটু পিছিয়ে পরেছিলেন। তবে দেশে ফিরেই তিনি বেশ উদ্যম নিয়ে কাজ শুরু করেন। সাফল্যও পান সিঁথি। তিনি বলেন, যেই না সঙ্গীতে আবার পুরোদমে কাজ শুরু করেছি, অমনি শুরু হয়ে গেলো করোনা মহামারী। তাই এখন এই দুঃসময়ে গান নিয়ে আমার নতুন প্রচেষ্টা সিঁথির অতিথি। সবশেষে আমি বলবো – এটা একান্তই আমার নিজের প্রোগ্রাম। নামটাও আমাকে নিয়ে- ‘সিঁথির অতিথি’। এটার মধ্যে আমার সমস্ত ভালো লাগা, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। আমি মন থেকেই ভালোবেসে এই কাজটা করেছি। আমার গানের শ্রোতা – দর্শক – শ্রোতাদের কাছে আমার অনুরোধ – আপনারা সিঁথির অতিথি দেখবেন। আমাকে যারা ভালোবাসেন, তারা তো আমাকে পাবেনই, সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকছে আপনাদেরই একজন প্রিয় শিল্পী।
আপনার মন্তব্য দিন