তুষার আদিত্য : তিনি কামরুন্নাহার আন্না। সদালাপী, বিনয়ী আর অত্যন্ত আন্তরিক মনের সহজ সরল একজন মানুষ। পেশায় তিনি একজন অভিনেত্রী। আন্নার মূল পরিচিতি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে। তবে চলচ্চিত্রের পাশাপশি তিনি শতাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। বরাবরই প্রচারের আড়ালে থাকা এই গুণী অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেন এই প্রতিবেদক। কামরুন্নাহার আন্না বলেছেন তার না বলা অনেক কথা।
প্রয়াত গুণী চিত্রনির্মাতা শহিদুল ইসলাম খোকনের আবিষ্কার কামরুন্নাহার আন্না। খোকনের “ভন্ড” ছবির মাধ্যমে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত হন বলে জানান আন্না। তিনি বলেন, মূলত খোকন ভাইয়ের আগ্রহ আর উৎসাহেই আমার চলচ্চিত্রে আসা। তার অনেকগুলো ছবিতে আমার অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
আন্না অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ভন্ড, ম্যাডাম ফুলি, ভালোবাসা সীমাহীন, বস্তির শাহেন শাহ, বাস্তব, নয়া কসাই, জ্যান্ত করব, পাঞ্জা, আম্মাজান, সুরাইয়া, এ চোখে শুধু তুমি, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, লাভ ইস্টিশন, ভালবাসলেই ঘর বাধা যায় না, ফুল নিবো না অশ্রু নিবো ইত্যাদি। তিনি জানান, চলচ্চিত্রে নায়িকা বাদে সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। নায়িকা হতে পারেননি বলে আন্নার মনে কোন হতাশা বা আফসোস নেই। আন্না বলেন, চলচ্চিত্রে কাজ করার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না সত্ত্বেও আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি – এটাই আমার শিল্পী জীবনের বড় সার্থকতা। এর জন্যে আমি খোকন ভাইয়ের প্রতি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবো।
আন্না জানান, চলচ্চিত্রের বাইরে তিনি টিভি নাটকে অভিনয় করছেন। শতাধিক নাটকে নানামুখী চরিত্রে অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছে বলে তিনি জানান। অভিনীত কিছু উল্লেখযোগ্য নাটক হলো – রঙের সংসার, দহন, কী আশায় বাঁধি খেলাঘর, নীড় খোঁজে গাংচিল ইত্যাদি। তিনি জানান, এখনও তিনি চলচ্চিত্রের পাশাপশি নাটকে অভিনয় করে যাচ্ছেন। কারণ, তিনি অভিনয়কে অসম্ভব ভালোবেসে নিজের আজীবন সঙ্গী করে নিয়েছেন।
করোনাকালীন চলমান জীবন নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে আন্না বলেন, করোনাকালীন বেকার জীবন পার করছি। খুব শীঘ্রি কাজে ফিরবো ইনশাল্লাহ। তবে বেকার থাকলে সবচেয়ে বড় রহমত হলো – এখনও সুস্থ আছি, বেঁচে আছি। তিনি আরও বলেন, এই করোনায় আমাদের শিল্প মাধ্যমের অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা নাজুক, এর ওপর করোনা তাণ্ডবে বিনোদনের এই বৃহৎ মাধ্যম এখন মৃতপ্রায় শিল্প। একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে এর জন্যে অনেক কষ্ট হয় আমার। সবাই মিলে সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে চলচ্চিত্রের সামগ্রিক উন্নয়নে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করছি।
আন্না জানান, তার অভিনীত অলরাউন্ডার, বান্ধব, বাহুবীর এবং বীরযোদ্ধা ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। চারটি ছবিতেই তিনি অসাধারণ সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলে জানান।
সবশেষে কামরুন্নাহার আন্না বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ। করোনা আমাদের চলচ্চিত্রের ক্ষতি করে গেলেও হয়তো একদিন এই শিল্প মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবে। তেমনি আমাদের শিল্পীদের সম্মানের আসনটাও আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত রেষারেষি ভুলে গিয়ে একটি পরিবার হয়ে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। আমি মনে করি – কেবল সম্মিলিত ঐক্য আর চেষ্টাই পারে দেশীয় চলচ্চিত্রের মঙ্গল বয়ে আনতে।
আপনার মন্তব্য দিন