এই সময়ে ত্বকের যত্নশীতে ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। শীতে ঠাণ্ডায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। আপনার সুন্দর ত্বক ও সুন্দর চুলের কথা। শীত এই সময়ে দেখবেন আপনার চুল রুক্ষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার হাত – পা – মুখও খসখসে হতে শুরু করেছে। শীতে গ্লিসারিন আপনার সঙ্গী করুন। এই গ্লিসারিন দিয়েই আপনি আপনার রূপচর্চার সবকিছু করতে পারবেন, সঙ্গে রাখতে হবে আরও কিছু উপাদান। এই শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে লিখেছেন সাবেক চিত্রতারকা ও আন্না’স মেকওভার স্টুডিওর স্বত্ত্বাধিকারী বিউটি এক্সপার্ট নাহিদা আশরাফ আন্না।
এই সময়ে ত্বকের যত্নহাত – পায়ের যত্ন : এক চা চামচ বেকিং সোডা, এক চা চামচ গ্লিসারিন, এক চা চামচ গোলাপজল, দুই চা চামচ মুলতানি মাটি, দুই চা চামচ ব্রাউন সুগার – সব একসঙ্গে মিশিয়ে একদিন পরপর আপনার হাত, পা ও মুখে লাগিয়ে সার্কেল এন্টি সার্কেল করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক কয়েক মিনিটেই উজ্জ্বল, নরম ও মসৃণ হয়ে ওঠবে।
চুলের যত্নে গ্লিসারিন : এক চা চামচ নারকেল তেল, এক চা চামচ গ্লিসারিন, এক চা চামচ অলিভ অয়েল, এক চা চামচ মধু মিশিয়ে হাল্কা গরম করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। এতে আপনার চুল ফাটার সমস্যা থাকবে না, চুলও সুন্দর হবে।
মুখের যত্ন গ্লিসারিন : এক লিটার পানি, কয়েকটা গোলাপ ফুল, এক চা চামচ গ্লিসারিন এবং সমপরিমাণ গোলাপজল প্রথমে একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন ভালোভাবে। এরপর গোলাপের পাপড়িগুলো ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ঢেকে দিন। পানিটা পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে গোলাপজল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। যখনই হাত, পা, মুখ ধোবেন এই ঠাণ্ডা পানি টোনার হিসেবে ব্যবহার করবেন।
শীতে প্রতিদিনের যত্নে এক বোতল গ্লিসারিন, এক বোতল গোলাপজল, এক চিমটি কর্পুর মিশিয়ে রেখে দিন। সারাদিন যতবার হাত – পা ধোবেন, ততবার এবং অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে একবার এই মিশ্রণ হাতে – পায়ে লাগিয়ে নিন। এতে আপনার হাত – পা মসৃণ হবে।
এই সময়ে ত্বকের যত্নমনে রাখতে হবে, সঠিক ক্রিম, সঠিক খাবার ত্বককে ফেটে যেতে দেয় না। ফলে ত্বকের যত্ন এবং শরীরের যত্ন – এই সময় খুবই জরুরি। তাই তো চটজলদি দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে শীতকালে ত্বক এবং শরীর ভালো রাখা যায়।
হাল্কা গরম জলে স্নান করুন : ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করা যেমন কষ্টকর, তেমনই ক্ষতিকরও। কারণ ঠাণ্ডা জলে স্নান করলে হঠাৎ করে ঠাণ্ডা লেগে যেতেই পারে। তাই মুখ বা শুধু হাত ধুতে নয়, স্নান করার সময়ও হালকা গরম জল ব্যবহার করা উচিত। কারন এতে ত্বকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তৈলাক্তভাব বজায় থাকে।
সঠিক ক্রিম বেছে নিন : অনেকেই শীতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করেন, যা কিছু সময় পর ত্বককে পুনরায় শুষ্ক করে তোলে। শীতকালে ওয়াটার বেসড ক্রিমের থেকেও অয়েল বেসড ক্রিম মাখা ভাল। এতে ত্বক আদ্র থাকে। এছাড়াও, শীতকালে নানা সুগন্ধে ভরা বডি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিছু সাবধানতা নিন : শীতকালে ত্বকের যত্নে সাধারণ কিছু সাবধানতা গ্রহণ করতেই হয়। তাই রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন মাখতে পারেন।
শরীরকে আদ্র রাখুন : অনেকেই শীতকালে ঘরে হিটার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু হিটারের বদলে চেষ্টা করুন হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে। কারণ, হিটার ঘরের ভিতরের পরিবেশকে গরম করে তুললেও বাতাসকে খুব শুষ্ক করে দেয়, যা ত্বকের জন্য একদমই ভাল নয়।
এই সময়ে ত্বকের যত্নজলপান করুন : আমরা অনেকেই শীতকালে খুব কম পরিমাণে জল পান করি, যা শরীরের জন্য ভাল নয়। এছাড়া শরীরের বাইরে গরম লাগলেও শরীরের ভিতরে তাপমাত্রা সঠিক রাখতে জল খাওয়া খুবই জরুরি। সেক্ষেত্রে শীতকালে জল খানিকটা গরম করেও পান করা যেতে পারে। সঙ্গে লেবুর রস কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিলে খুবই উপকার মিলবে।
রাতে ক্রিম মেখে ঘুমান : শীতকালে শরীরকে আদ্র রাখা খুবই জরুরি। আর তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করতেই হয়। আমাদের সারা শরীরে সব থেকে বেশি শুষ্ক থাকে হাত, পা, হাঁটু, কপাল ইত্যাদি অংশগুলো। তাই রাতে শোয়ার আগে এইসব জায়গায় ভালো করে ক্রিম মেখে তারপর মোজা পড়ে নিতে হবে। এতে সকাল অবধি আদ্রতা বজায় থাকবে।
নিয়ম করে শরীর পরিষ্কার করুন : শীতকালে গায়ে সাবান মাখা একটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সারাদিন ক্রিম মেখে থাকলে কিছু না কিছু পরিমাণ ধুলো, নোংরা শরীরে জমা হবেই। একইসঙ্গে জমা হতে থাকে মরা কোষও। তাই নিয়ম করে ত্বক পরিষ্কার রাখাও শীতকালে খুবই জরুরি।
বিষাক্ত, অ্যালার্জিবর্ধক উপাদান বর্জন করুন :
শীতকালে অনেকেরই নানারকম ত্বকের সমস্যা দেখা যায়। যেমন, শ্বাসকষ্ট বাড়ে, অ্যালার্জি বৃদ্ধি হয় ইত্যাদি। তাই এই সময় কেমিক্যাল মিশ্রিত ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করাই ভাল। অনেকের উলের থেকেও অ্যালার্জি হয়। তাদের এই সময় মোটা জাতীয় অন্যধরণের পোশাক পড়া উচিত। এছাড়াও, এমন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত, যাতে অ্যালার্জি না হতে পারে।
এই সময়ে ত্বকের যত্নভিতর থেকে আদ্র থাকুন : শীতকালে শরীরের বাইরে শুধু যত্ন নিলে হবে না। একইসঙ্গে যত্ন নিতে হবে শরীরের ভেতরেরও। শীতকালে তাই বেশি করে এমন খাবার খেতে হবে, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকে। যেমন – তরমুজ, আপেল, কমলালেবু ইত্যাদি এবং হরেক রকম সব্জি। খেয়াল রাখতে হবে, শরীরে যেন সঠিক পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ঢুকতে পারে। তাই নিয়ম করে মাছের তেল, সামুদ্রিক মাছ এবং ফ্ল্যাক্স সিড খাওয়া দরকার। এতে শরীর এবং ত্বক দুইই ভাল থাকবে।
সঠিক ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন : অনেকসময় ক্লিঞ্জার আমাদের ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। তাই শীতকালের জন্য সঠিক ক্লিঞ্জার ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এমন ধরণের ক্লিঞ্জার ব্যবহার করতে হবে, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আদ্রতা সম্বলিত উপকরণ থাকে। এতে ত্বক আদ্র থাকবে। এছাড়াও, ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে টোনার লাগাতে হবে। এরপর ভাল কোনও ক্রিম ব্যবহার করুন।
এই বিষয়ে আমার কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ নিতে চাইলে আজই চলে আসুন আন্না’স মেকওভার স্টুডিওতে (একিউপি শপিংমল,নিউ বেইলি রোড ১৪৩/২, ঢাকা।)
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
মডেল : সাবরিনা প্রমি
আপনার মন্তব্য দিন