দেবী গাফফার : আমার যখন শুকনা কাশি, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো, তখন প্রথমেই ভেবেছি আমার যদি যেতে হয় কার কার কষ্ট হবে। হিসাব করলাম কারও কষ্ট হবে না। আমাকে মনে পড়বে, কিন্তু জীবন চলবে।
বাচ্চারা সব বড়। বাকি থাকে অমি সাহেব। মা বাবা, ভাই বোন, কাজিন সবাই অমিকে একটু বেশি ভালোবাসে। ওনারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। হ্যাঁ, আমরা দুজন ভালো বন্ধু। বন্ধু হারানোর ব্যাথায় হয়তো কিছুটা কাতর হতো। আমার কোন পিছুটান ফিল হয়নি। তাছাড়া লাখো মানুষের যা হচ্ছে, আমারও হয়েছে হয়তো। সমাজের অনেক প্রয়োজনীয় মানুষ চলে যাচ্ছেন, ওনা তুলনায় আমি তুচ্ছ।
প্রতিদিন রুটিন করে ছাদে থেকেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।একা থাকতে ভালোই লেগেছে। কারণ, কথা বলতে কষ্ট হতো। একা বসেই জীবনের হিসাব মিলিয়েছি। ফলাফল হলো – আমার কোন শখ নেই। কিছু চাওয়া পাওয়াও নেই। তাহলে যেতে ভয় কোথায় ?
আমি নিশ্চিন্তে ছাদ বাসা নিয়েই বিজি ছিলাম। আমার কথা বলতে কষ্ট হতো, তাই ছাদবাগানই যেনো আমার শান্তির ঠিকানা হয়ে গেলো। আমি যতটুকু ভেবেছিলাম আমার গাছের কথা, ওদের দেখাশোনা করার কেউ থাকবে না। ওদেরকে বার বারই বলেছি – আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার আর কারও কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজনই মনে হয়নি।
অমি সাহেব সারাক্ষণ খেয়াল রেখেছেন, কতো রকমের কমেডি করে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করেছেন। ছাদে টাইম টু টাইম চা ওষুধ পাঠিয়েছেন। অমি সাহেব এর প্রতি বরাবরের মতো এবারও আমি কৃতজ্ঞ। আর একজন মানুষ এর কথা না বললে অন্যায় হবে। ও আমাদের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা ওমর সানী। আমার শ্বাসকষ্ট জানার পরেই প্রতি বেলায় ফোন করে খবর নিয়েছে। এই ওষুধ সেই ওসুধ খাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছে। সানীর সাথে আমাদের পরিচয় সেই ৯৪ সাল থেকে বোধ হয়, সানী ভালো বলতে পারবে। আমাদের প্রযোজনায় নির্মিত প্রথম ছবি “মহৎ” এর হিরো ছিলো। ওই ছবি সুপার হিট হয়েছিল।
এতদিন পরেও সানী সম্মানের সঙ্গে বার বার ফোন করে খবর নিয়েছে। ওর কথা মতো মোনাস 10 খেয়ে আরাম পেয়েছি। কৃতজ্ঞ ভাইসম দেবর সানী। সানীর জন্য অন্তর থেকে দোয়া।
এবার আসি খাওয়া দাওয়া প্রসঙ্গে। ভেবেছি যদি মরেই যাই ফিগার দিয়ে কি হবে ? আম, ডিম, হরলিক্স, মাছ, মাংস সব খেয়েছি। এত রুটিন করে খাবার ইহজীবনে আমি খাইনি।
এই সময়টায় কোন রকম নার্ভাসনেস ধারে কাছে আসতে দিইনি। কয়েকবারই আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়েছি – এত এত মানুষের ভালোবাসা দেখে।
এখন সত্যি মরতে আর ভয় নাই। সবার প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসাসহ কৃতজ্ঞতা। মনে রাখবেন সবাই – করোনাকে ভয় পেলেন তো হেরে গেলেন।
লেখক : ফেসবুক এক্টিভিস্ট ও সৌখিন ছাদ কিষানি
আপনার মন্তব্য দিন