ছায়াছন্দ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের দাপটে কলকাতার সিনেমা, সিরিয়াল সব কিছুরই শুটিং ও প্রচার বন্ধ। সেখানকার সিনেমা হলও বেশ আগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টলিউড তারকারা কার্যত এখন গৃহবন্দি হয়ে পরেছেন। কারও কাছে এটা ছুটি কাটানোর উপলক্ষ্য হলেও কারও কাছে আবার এটা যেনো বিশাল এক বিড়ম্বনা। তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে কলকাতার অধিকাংশ তারকাই সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তারা জনতাকে সচেতন করার বার্তাও দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাইমা সেন সেদিন জানালেন, ঘরে বসে তিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়া আর নেটফ্লিক্সে মজে আছেন। ইনস্টাগ্রামে জিম করার ছবিও দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে রাইমা সেন বলেন, আমার বাড়ির ছাদেই জিম রয়েছে। সেখানেই এক্সারসাইজ করছি। এই পরিস্থিতিতে তো পাবলিক জিমে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। এখন বাড়িতে সিনেমা দেখে, বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি।
জানা গেছে, রাইমা সেনের মতোই গৃহবন্দি আরেক টলিউড তারকা শুভশ্রী। এপ্রিলের ৩ তারিখে তার ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিছুদিন ধরে তিনি এই ছবির প্রচারনাও করেছিলেন। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়নি। আর তাই এই নায়িকা এখন বাড়িতেই অবসর কাটাচ্ছেন। অবশ্য তার স্বামী পরিচালক রাজ চক্রবর্তী গেলো মাসের ১৮ তারিখ সর্বশেষ বাইরের কাজ করেছেন। তবে গেলো এক মাস ধরে তিনিও বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
শুভশ্রী আর রাজ যুগলে সময় কাটাচ্ছেন কী করে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কলকাতার এক গণমাধ্যমকে রাজের মজাদার জবাব – আমি এক জায়গায় বসে থাকতেই পারি না। কী করে এত দিন বাড়িতে আটকে আছি, সেটাই অবাক করা বিষয়! ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও আর নতুন কিছু দেখার নেই। শুভশ্রীর অবশ্য এতে খুব ভাল হয়েছে। ও বাড়ি থেকে বেরোতেই চায় না। ওকে বিরক্ত করে সময় কাটাতে বেশ ভালোই লাগছে!
জানা গেছে, নিজের প্রযোজনা সংস্থার অফিসও বন্ধ রেখেছেন রাজ। আর এক কাজপাগল অভিনেতা দেব বলেন, এত দিন কী ভাবে বাড়িতে আছি, সেটাই এখন ভাবছি। আমার অফিস বন্ধ রেখেছি। সকলকে ছুটিও দিয়ে দিয়েছি। অন্যদের মতো পুরো শিডিউল উলট পালট হয়ে গেল আমারও। ‘গোলন্দাজ’, ‘কিশমিশ’ দুটো ছবিরই শুটিংয়ের ডেট পিছিয়েছে। আগামী মাসে তার প্রযোজনায় ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ মুক্তির কথা ছিল। তাও পিছাতে পারে বলে জানিয়েছেন সাংসদ অভিনেতা দেব। তার বাড়িতেই রয়েছে জিম সেট – আপ। ঘাম ঝরাতে সেটাই এখন দেবের ভরসা।
জানা গেছে, বাইরের কাজ বন্ধ রেখেছেন সাংসদ অভিনেত্রী নুসরাত জাহানও। কলকাতায় করোনার আঘাত হানার শুরুতেই বাতিল করেছেন তার ব্র্যান্ড প্রোমোশন, ইভেন্টের কাজও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দিনযাপনের ছবি দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। জানা যায়, নুসরাত ছবি আঁকতে ভালবাসেন। সময় পেয়েই ক্যানভাস আর রং তুলি নিয়ে বসে পরেছেন বলে জানিয়েছেন কলকাতার এক গণমাধ্যমকে। এর ফাঁকে চলছে সিনেমা দেখা, বই পড়া।
কলকাতার অফট্র্যাক এর ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা নির্মাতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভিযান’ ছবির শুটিং চলছিল। সরকারি নির্দেশ মেনে তিনি শুটিং বাতিল করে ঘরেই অবস্থান। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অসুবিধে হলেও তখন শুটিং করা অনুচিত ছিল বলেই প্যাকাপ করে দিয়েছি। যদিও আমার পরবর্তী শুটিং শিডিউলের পুরোটাই করোনার এখন এলোমেলো হয়ে গেছে।
কলকাতার গণমাধ্যমের খবর টেলি ইন্ডাস্ট্রিতেও ছুটির মৌসুম চলছে। এর আগে ৩০ মার্চ পর্যন্ত শুটিং বন্ধ সব সিরিয়ালের। পরে পুরো ভারত লকডাউনের পর সব কিছুই এখন বন্ধ। পুরনো সিরিয়াল আর অনুষ্ঠান দিয়েই টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার সচল রাখা হয়েছে। শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই ‘কোড়া পাখি’ ধারাবাহিকের প্রধান অভিনেত্রী পার্নো মিত্র অবসর সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই ছুটি পেয়ে তো লাভ নেই। কোথাও বেড়াতেও যেতে পারলাম না। বাড়িতে ঘুমোচ্ছি আর সিনেমা দেখছি। পার্নোর পরামর্শ – করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোন অপশন আপাতত নেই।
আরেক টেলিভিশন অভিনেত্রী তিয়াশা রায় এখন কার্যত গৃহবন্দি অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের এই অভিনেত্রী বলেন, শুটিং না থাকলে শপিং করতে ভালবাসি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেটাও এখন সম্ভব নয়। তাই হাত গুটিয়ে ঘরেই সময় কাটাচ্ছি।
গৃহবন্দি জীবন পার করার কারণে বাংলাদেশের মতো কলকাতার তারকারা গেলো ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ জমকালো ভাবে উদযাপন করতে পারেননি। তারা ঘরেই যে যার মতো করে বর্ষবরণ করেছেন। সবাইকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নিজেদের মজার ছবিও শেয়ার করেছেন। অনেকে আবার খাবার দাবার এর ছবিও পোস্ট করেছেন। সব মিলিয়ে ব্যস্ত মানুষগুলো এখন অনাকাঙ্ক্ষিত অবসরে ঘরবন্দী জীবনকে বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের মধ্যে উপভোগ করে রাখছেন।
আপনার মন্তব্য দিন