তুষার আদিত্য : বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে টানা কয়েক মাস ধরেই বাসায় অবস্থান করেছিলেন অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী সীমানা হোসেন সীমা। তখন পেশাগত কাজ থেকে দূরে থাকলেও বাসায় তিনি নিয়মিত নাচের প্র্যাকটিস ও এক্সারসাইজ করছেন ফিগার নিয়ন্ত্রণের জন্যে। ওই সময় সীমা জানিয়েছিলেন, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি কাজে ফিরবেন। তাই লকডাউন সময়টা নিজের জন্যে ব্যয় করেছেন সীমা। কাজে ফেরার ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিন পরেই গ্ল্যামারাস এই অভিনেত্রী অভিনয়ে ফিরেছেন চলতি সময়ের আলোচিত ধারাবাহিক নাটক “দাদো”র মাধ্যমে। নাগরিক টিভিতে প্রচার চলতি এই নাটকটি পরিচালনা করছেন আদিত্য জনি। সীমা জানান, এই ধারাবাহিকের একটি গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। আর ইতিমধ্যে তার অভিনয় বেশ সাড়া ফেলেছে দর্শকদের মাঝে।
মুন্সীগঞ্জের মেয়ে সীমার পৈতৃক বাড়ি শ্রীনগরে হলেও বাবার সরকারি চাকুরীর সূত্রে তার জন্ম ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। ঢাকাতেই তার বেড়ে উঠা, পড়াশোনা – সবকিছু। তিনি জানান, শোবিজে তার আগমন টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। ২০০৭ সালে গুণী নির্মাতা সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত “দারিদ্র্য বিলাস” নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার শোবিজ ক্যারিয়ার শুরু। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটক হলো সংসার সমুদ্র, তিনকন্যা, চাঁপা খালা, অনুভবে রয়েছো, তবুও তুমি আমার, অজানা ভালোবাসা, সেই তুমি ইত্যাদি। সীমা নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন, নাটকে অভিনয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা আমার ছিল না, শুধু ছাত্রী জীবনে স্কুল – কলেজে পড়াশোনার সময় নাটিকায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ছিল। সাদেক সিদ্দিকী স্যার আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুবাদে উনার আগ্রহে টিভি নাটকের অভিনেত্রী হিসেবে আমার অভিষেক ঘটে। উনার কাছে তাই আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
সীমা এই প্রতিবেদককে জানান, টেলিভিশন নাটকের অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি এবং ব্যস্ততা আসার পর তিনি বিনোদনের বৃহৎ মাধ্যম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন, নাটকে অভিনয় করতে করতেই আমার চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তাছাড়া একজন অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় মেধা ও দক্ষতা প্রমাণের সর্বোচ্চ মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। তাই একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগ্রহ – স্বপ্ন দুটোই আমার ছিল।
সীমা জানান, তিনি ৩৫ মি:মি: যুগের দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা পি এ কাজল এবং উত্তম আকাশের ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। তার অভিনীত প্রথম ছবি অন্তরে আছো তুমি। তার অভিনীত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হলো চাচ্চু আমার চাচ্চু, দানব সন্তান, দেখাও গুরু ইত্যাদি।
চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করলেও ওই সময়ে তিনি নাটক এবং নাচ নিয়ে বেশি ব্যস্ততার কারণে চলচ্চিত্রে আর অভিনয় করেননি সীমা। তবে তার আবার ইচ্ছে হয়েছে বিনোদনের বৃহৎ মাধ্যম চলচ্চিত্রে কাজ করার। তিনি জানান, ইতিমধ্যে বদিউল আলম খোকন, সাদেক সিদ্দিকী, সায়মন তারিক সহ বেশ কয়েকজন চিত্রনির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে তাদের ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে। এই প্রসঙ্গে সীমা বলেন, আশা করছি – করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে আমি আবার চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করবো।
নিজের চলমান সময় প্রসঙ্গে সীমা বলেন, করোনা আমাদের শোবিজ সহ পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক দিন আমরা টানা ঘরে অবস্থান করেছি। পরিবারকে সময় দেওয়া, বাসায় রান্নাবান্না, নাচের প্র্যাকটিস আর ফিগারের যত্নে এক্সারসাইজ করে সময় কাটিয়েছি। এখন আমি কাজ নাটকে অভিনয় করছি। একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে নিজের পেশাগত কাজে ফিরতে পেরে সত্যিই আমার অনেক ভালো লাগছে।
চলমান সময়ে শোবিজ ক্যারিয়ার নিয়ে সীমার পরিকল্পনা হলো – নাটক এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করা। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমি নতুন করে ভালো কিছু চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয় করতে চাই। নিজেকে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে পুরোদমে নাটক এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই আমি। তবে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করবো। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচটা আমি ধরে রেখে নিয়মিত চালিয়ে যেতে চাই।
সীমার কাছে তার অভিনীত প্রচার চলতি “দাদো” নাটক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বরিশালের আঞ্চলিক ভাষার অসাধারণ একটি নাটক। এই নাটকে দারুন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন প্রযোজক মাঈনুল হাসান খোকন এবং পরিচালক আদিত্য জনি। আমি তাদের দুজনের প্রতি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ আমাকে সুন্দর একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার জন্যে। দাদো নাটকটি সপ্তাহে প্রতি শনি রবি সোম মঙ্গলবার রাত দশটায় নাগরিক টিভিতে।
আকর্ষণীয় ও ধারালো ফিগারের অধিকারী ও প্রতিভাময়ী তরুণী সীমানা হোসেন সীমা সবশেষে জানান, তার বাবা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী করতেন। তার বাবার শখ ছিল – আদরের মেয়ে সীমা অভিনেত্রী হোক। সীমা বলেন, মূলত বাবার শখ পূরণ করতেই তার অভিনেত্রী হয়ে ওঠা। অতঃপর নৃত্যশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। আমি আমার মৃত বাবার শখের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজীবন দেশীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করে যেতে চাই।
আপনার মন্তব্য দিন