ছায়াছন্দ ডেস্ক : বলিউডের নায়িকা হিসেবে শুরুতে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন পরিণীতি চোপড়া। অবশ্য চলচ্চিত্র ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে এলেও অভিনয় নিয়ে এগোনোর স্বপ্ন খুব একটা দেখতেন না তিনি। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করতেন। পরে অবশ্য চলচ্চিত্রকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পরিণীতি। কিন্তু পরিণীতির চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের পরিণতি এখন খুব একটা ভালো নয়। তার কোনও কূলই রক্ষা হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বলিউডের নায়িকা হলেও পরিণীতি চোপড়ার স্বপ্ন ছিলো ব্যাংকার হওয়ার। কিন্তু তিনি না হতে পারলেন ব্যাংকার, না উঠতে পারলেন ফিল্ম ক্যারিয়ারে শিখরে।
জানা যায়, বলিউডের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানী মুখার্জির পিআর থেকে বলিউডে যাত্রা শুরু করা পরিণীতি চোপড়া তার বলিউডি ফিল্ম ক্যারিয়ারে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হারিয়ে গেলেন।
হরিয়ানার অম্বালায় জন্ম নেওয়া পরিণীতি ব্যবসায়ী বাবার মেয়ে। ছোট থেকেই তার স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হওয়ার। পড়াশোনাতেও তিনি ভাল ছিলেন। ১৭ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান। ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে বিজনেস, ফিন্যান্স এবং ইকোনমিকস এ স্নাতকোত্তর করেন পরিণীতি। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভাল হওয়া সত্ত্বেও তিনি পড়া চলাকালীন উপার্জন করতে শুরু করেন। তখন তিনি পয়সা উপার্জন করতেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের কেটারিং বিভাগের টিম লিডার হয়ে কাজ করার সুবাদে।
২০০৯ সালে যখন বিশ্ব জুড়ে চাকরির বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন পরিণীতি ভারতে ফিরে আসেন বলে জানা যায়। তখন তিনি দিদি প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কাছেই থাকতে শুরু করেন। দিদির সঙ্গেই যশ রাজ ফিল্ম স্টুডিওতে যান পরিণীতি। তার পর এই স্টুডিওর পাবলিক রিলেশন টিমের সঙ্গে ইন্টার্নশিপ করতে শুরু করেন। বেশ কিছু দিন এভাবে কাজ করার পর তার চাকরি স্থায়ী হয়ে যায়। পরিণীতির তখন কাজ ছিল রানী মুখার্জি, রণবীর সিংয়ের মতো অভিনেতাদের ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং তাদের প্রমোশন দেখা। তাদের পিআর হয়েই তখন কাজ করতেন পরিণীতি চোপড়া।
জানা যায়, যশ রাজ ফিল্মের ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’ এর প্রমোশনের পুরো দায়িত্ব ছিল পরিণীতির উপর। ফিল্মের প্রমোশনের কাজ করার সময় তার অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় বলে জানা যায়। তার আগ পর্যন্ত অভিনেত্রী হওয়ার কোনও ইচ্ছাই অবশ্য ছিল না তার। পরিচালক মণীশ শর্মা তাকে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ‘জাব উই মেট’ এর একটি দৃশ্যে অডিশন দিয়েছিলেন পরিণীতি। তার অভিনয় আদিত্য চোপড়ার ভাল লাগে এবং পরবর্তী তিনটি ফিল্মে সাইন করানো হয় পরিণীতিকে। তো, তখনই তার জীবনের পথ চলার গতিপথ পাল্টে যায়।
২০১১ সালে ‘লেডিস ভার্সেস ভিকি বহল’ ছবির নায়িকা হিসেবে পরিণীতির অভিষেক ঘটে। এই ছবিটা খুব একটা লাভের মুখ না দেখলেও পরিণীতির অভিনয় দেখে দর্শকরা মুগ্ধতা ছড়ান। তার দ্বিতীয় ছবি ছিল অর্জুন কাপুরের বিপরীতে। পরপর দুটো ছবি দিয়েই তিনি দর্শকদের মন জিতে নিয়েছিলেন। পরিণীতির তৃতীয় ছবিও হিট হয়। সঙ্গত কারণেই ওই সময়ে অনেকগুলো পুরস্কারও জিতে নেন বলিউডের ওই সময়কার আলোচিত এই অভিনেত্রী।
জনশ্রুতি আছে – গ্ল্যামার দুনিয়ায় টিকে থাকতে গেলে শুধু অভিনয় দিয়েই হয় না। পরিণীতিকে নিয়ে ধীরে ধীরে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। জানা যায়, ওই সময় পরিণীতির চেহারা পছন্দ করছিলেন না দর্শক। তাছাড়া অন্যান্য নায়িকাদের তুলনায় তিনি ছিলেন মোটা। ২০১৪ সালে ‘দাওয়াত এ ইশক’ ছবির পর তার ক্যারিয়ার হঠাৎ করেই নিম্নমুখী হতে থাকে।
এর ঠিক তিন বছর পর ২০১৭ সালে পরিণীতি চলচ্চিত্রে কামব্যাক করেন। তখন চেহারাতেও অনেক পরিবর্তন আসে তার। কিন্তু কামব্যাকের পর তার একমাত্র সুপার হিট ছবি ‘গোলমাল এগেইন’। এই ছবি সুপারহিট হওয়ার পিছনে অবশ্য তার খুব একটা কৃতিত্ব নেই। ‘গোলমাল’ সিরিজের সব ছবি এমনিতেই হিট। তাই এই ছবির সাফল্যের ভাগ পরিণীতিকে দিতে নারাজ বলিউডি ফিল্ম ক্রিটিকরা।তাই তো অভিনয়ে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ১০ বছরেই পরিণীতির বলিউড ফিল্ম ক্যারিয়ারের ঝিমিয়ে পড়া পরিণতি।
আপনার মন্তব্য দিন