ছায়াছন্দ প্রতিবেদক : সুনেরাহ বিনতে কামাল সত্যিকার অর্থেই ভাগ্যবতী। চলচ্চিত্র অভিনয় করে প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর খেতাব। সঙ্গত কারণেই সুনেরাহ উচ্ছ্বসিত। ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা এই তরুণী প্রথম ছবিতেই অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করেছেন। এরইমধ্যে তার স্বপ্ন পূরণও হয়েছে। অভিষেক চলচ্চিত্র দিয়েই তিনি অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে সুনেরাহ’র এমন সাফল্য। এই সৌভাগ্যবতী অভিনেত্রী জানান, তার এই পথচলা কিন্তু সহজ ছিল না তার। ধাপে ধাপে নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। সুনেরাহ টানা নয় বছর করেছেন মডেলিং। পরিশ্রমের সাফল্যও এসেছে।
সুনেরাহ’র শুরুর গল্পটা জেনে নেওয়া যাক। তার সংস্কৃতি চর্চার সূচনা নাচ দিয়ে। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) নাচ শেখা শুরু করেন। শিখেছেন গানও। স্কুলে থাকতে থিয়েটারেও অভিনয় করেছেন বলে জানান। পাশাপাশি খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সুনেরাহ জানান, তখন বাস্কেটবল ও ভলিবল খেলা ছিল তার পছন্দের।
সুনেরাহ বলেন, আমি বিটিভির তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী ছিলাম। সেখান থেকে এক পরিচিত জনের মাধ্যমে র্যাম্পে পথচলা শুরু। তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী। র্যাম্পে তখন আমার নজরকাড়া পারফরমেন্সের জন্য দেশের একটি বড় ফ্যাশন হাউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ায় সুযোগ পাই।
সেই থেকে তিনি দাপিয়ে কাজ করেন ফ্যাশন দুনিয়ায়। ডানপিটে বলতে যা বোঝায় সবটাই ছিল সুনেরাহ’র মধ্যে। গেলো বছর স্টার সিনেপ্লেক্স প্রযোজিত ও তানিম রহমান অংশু পরিচালিত ‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রে একজন সার্ফারের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে সবার প্রশংসা পান তিনি। আর এবার এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন সুনেরাহ।
সার্ফারের চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করার প্রস্তুতিটা কেমন ছিল ? জানতে চাইলে সুনেরাহ বলেন, বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও নিতে হয়েছিল আমাকে। চট্রগ্রামের ভাষাও আমাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শিখতে হয়েছিল। পুরো বিষয়টি রপ্ত করতে হয় স্বল্প সময়ের মধ্যে। কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকলে যে কোন মানুষই অর্জন করতে পারে, আমার পুরস্কার প্রাপ্তি কিন্তু সেটাই প্রমাণ করলো।
প্রথম ছবিতেই চমক লাগানো অভিনয়। সেই সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া – এর অনুভূতি কেমন ? এর উত্তরে সুনেরাহ বলেন, এটি আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। ‘ন ডরাই’ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে, তাই ভালো লাগাটা একটু বেশিই। আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমি এই ছবিতে অভিনয় করার আগে কল্পনাও করিনি এমন সম্মানজনক একটি অর্জন আসবে। পুরস্কার পাবো সেই ভাবনা থেকে কাজটি করিনি। আমি যখন যে কাজটি করি, মন থেকে নিজের সেরাটা দিয়েই করি। প্রথম ছবি হিসেবে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। অভিনেত্রী হিসেবে সবারই স্বপ্ন থাকে – জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের। কিন্তু আমি জানতাম না প্রথম ছবিতেই এই অর্জনটা চলে আসবে। ছবি মুক্তির পর প্রশংসা এবং জাতীয় চলচ্চিত্রের জন্য নমিনেশন এটিই বড় প্রাপ্তি ছিল তখন। কিন্তু আমি যখন জানলাম – পুরস্কার পাচ্ছি সে, আনন্দ আমি ভাষায় বোঝাতে পারব না।
এই ছবিতে অভিনয়ের সময় শূটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ? সুনেরাহ বলেন, শূটিং অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। শূটিংয়ের সময় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। চরিত্রটি অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার জন্যে। শহরের একটি মেয়ে থেকে নিজেকে চট্রগ্রামের একজন লোকাল মেয়ে হিসেবে তৈরি করা, চট্রগ্রামের ভাষা শেখা – পুরো ছবিটিই তাই আমাকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে করতে হয়েছিল। আমার নিজেকে তৈরি করতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে।
সুনেরাহ নিজের প্রথম ছবির সাফল্যর পর পরবর্তী পথটা বুঝে শুনে চলতে চান বলে জানান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পর দায়িত্ববোধ বেড়ে গেছ বলে জানান। আর তাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রে তিনি চিন্তা ভাবনা করেই আগাতে চান। অবশ্য সব ধরনের ছবিতেই অভিনয়ে আগ্রহী তিনি । তবে এক্ষেত্রে গল্প ও চরিত্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে অভিনয়ের সুযোগ থাকবে, সেখানেই দেখা যাবে। সেটা নাটক, ওয়েব কনটেন্ট যাই হোক না কেন সব মাধ্যমে কাজ করতে চান সুনেরাহ।
সুনেরাহ বলেন, বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্প কিছুটা বৈরী সময় পার করলেও এখন বেশ ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে। মেধাবীরা চলচ্চিত্রে তাদের প্রতিভার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। সামনে ভালো কিছু হবে – এমন আশা আমার।
সুনেরাহ জানান, তার পছন্দের অভিনেতা মোশাররফ করিম। তাই সুযোগ হলে তার বিপরীতে কাজ করতে চান। মাঝে মাঝে ভালো মানের নাটকেও অভিনয় করতে চান। এই জন্যেই গেলো বছর একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার পছন্দের অভিনেত্রী জয়া আহসান। নায়ক হিসেবে ভালো লাগে শরিফুল রাজকে। শরিফুলের চলচ্চিত্রে সম্ভাবনা আছে বলে জানান সুনেরাহ। আর আগামীতে নিজে ভালো কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চান তিনি।
আপনার মন্তব্য দিন