জিনাত হাকিম : হঠাৎ অসুস্থ আজিজুল হাকিমকে নিয়ে আমি বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন আমাদের ছোট সন্তান ছেলে মুহাইমিন হৃদকে তার বাবাকে ‘বাই’ বলতে বললে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল – মা, আমার বাবা কি মরে যাবে ? ওর কথায় আমি একটু থমকে গিয়ে বললাম – না না, বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি নামাজ পড়ে দোয়া করবে। আল্লাহ বাবাকে যেন সুস্থ করে দেন। আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে হৃদ খেলায় মনোযোগী হয়। হাকিম ঠিকমত ছেলের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময়টুকুও পায়নি।
অন্যদিকে আমাদের মেয়ে নাযাহ এবং ওর স্বামী শুভ সরাসরি হসপিটালে হাজির। এই ঘটনা নভেম্বর ১২ তারিখের। ১৩ দিন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে ডাক্তার মহিউদ্দিন আহমেদ এর কাছে চিকিৎসা শেষে তাকে নিয়ে বাসায় আসি নভেম্বরের ২৫ তারিখে।
২৫ ডিসেম্বর এক মাস পূর্ণ হলো।
আলহামদুলিল্লাহ্। নিয়মিত চেকাপ ও ঔষধ সেবন শেষে আল্লাহর রহমতে আজিজুল হাকিম এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আল্লাহ্র কাছে কোটি কোটি শোকর। সেই সাথে যারা দোয়া করেছেন, আপনাদের প্রতি বারবার কৃতজ্ঞতা জানালেও শেষ হবে না। একটা সময় পর্যন্ত আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। সময়ের সাথে সাথে এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। জানতে পারছি সবার দোয়ার কথা। আজিজুল হাকিমের জন্য দোয়া করেননি – এমন কেউ নেই আমার জানা মতে। অনেকের নাম ধরে কৃতজ্ঞতা জানালেও আসলে সব নামই তো বাদ রয়ে গেছে। যা বলে শেষ করা অসম্ভব। অনেকের ফোন ধরতে পারিনি, অনেকের নাম মনেও করতে পারছি না। তাই বারবার ক্ষমা চাই – কেউ মনে কষ্ট নেবেন না।
দেশ ও দেশের বাইরে – বন্ধু – স্বজন – পরিচিত – সহকর্মী – মিডিয়ার আপজনেরা – ভক্ত – অচেনা মানুষেরা পর্যন্ত উৎকণ্ঠিত হয়ে হাকিমের জন্য আকুলভাবে দোয়া করেছেন । সুবহানাল্লাহ ! আপনাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। আসলে সকল ক্ষেত্রের সবাই নিঃস্বার্থ ভাবে, নির্বিশেষে আজিজুল হাকিমকে অকৃত্রিমভাবে কতটা ভালোবাসেন, স্নেহ করেন, শ্রদ্ধা করেন – এটা নজির হয়ে থাকলো আমাদের কাছে।
নিজের জীবদ্দশায় হাকিম তা দেখে উপলব্ধি করতে পেরেছে – এটা ওর জন্য আল্লাহ্র অশেষ কৃপা। এই পাওয়া দুরূহ, এই ভালোবাসা অনেক বড় সম্মানের, যা এই পৃথিবীতে কোন কিছুর বিনিময়েই পাওয়া সম্ভব না। আবারও তাই মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা যেনো সবাই সবার জন্য দোয়া করি। প্রার্থনায় মুক্তি চাই – পৃথিবী করোনামুক্ত হোক।
জিনাত হাকিম : জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা আজিজুল হাকিমের স্ত্রী এবং জনপ্রিয় টিভি নাট্যকার
আপনার মন্তব্য দিন