ছায়াছন্দ ডেস্ক : টানা চল্লিশ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে ৮৬ বছরে বয়সে থেমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় বর্ণিল পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন কলকাতার বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা, অভিনেতা – নাট্যকার – বাচিকশিল্পী – কবি – চিত্রকর। আজ (১৫ নভেম্বর) রবিবার দুপুর ১২:১৫ টায় মধ্য কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বরে বেলভিউ হসপিটালে ভর্তি হন সৌমিত্র। তিনি একটা সময়ে ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই অসুস্থতা স্বভাবতই তাঁকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। ফলে কখনও উন্নতি কখনও অবনতি, এই দোলাচলেই চলছিল হাসপাতাল – বন্দি সৌমিত্রর জীবন। এছাড়াও একাধিক কোমর্বিডিটি ছিল তাঁর। এর জেরে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে তাঁর। তবুও প্লাজমা থেরাপি, শ্বাসনালিতে অস্ত্রপচারসহ নানা ভাবে এই অভিনেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু শুক্রবার সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটে। তার হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অলৌকিক কিছু না ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। তারপরই দুশ্চিন্তার ছায়া নেমে আসে সৌমিত্রর অনুরাগীদের মধ্যে। রাতভর সেই নিয়ে টানাপড়েনের পর সকাল হতেই হাসপাতালে পৌঁছে যান সৌমিত্রর পরিবারের লোকজন।
কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়েও যান তারা। কিন্তু পরক্ষণেই হাসপাতালের তরফে ফের ডেকে পাঠানো হয় তাদের। তবে সেইসময় বাবার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সৌমিত্রকন্যা পৌলমী। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘‘বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। তার পর এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব আমরা। চিকিৎসকেরা ওখানে থাকতে বলেছেন আমাদের।’’
এর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অশীতিপর অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেলভিউ পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পৌলমীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। পৌলমী বলেন, ‘‘দুপুর দুইটায় প্রথমে গল্ফগ্রীনের বাড়িতে নিয়ে যাব বাবাকে। তার পর টেকনিশিয়ান স্টুডিও হয়ে রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাব। সেখান থেকে কেওড়াতলা শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেব আমরা। দিদি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। এত যত্ন করে, ভালবেসে, সম্মানের সঙ্গে বাবাকে আগলে রেখেছিলেন সকলে। বাবা চিরকাল আমাদের মনে রয়ে যাবেন।’’
আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সৌমিত্রকে ধরে রাখতে পারলেন বলে বেলভিউ হসপিটালে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘ফেলুদা আর নেই। অপু আমাদের বিদায় জানিয়েছেন। বিদায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উনি একজন কিংবদন্তী। বাংলা, ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র একজন মহান অভিনেতাকে হারাল। ওঁকে খুব মিস করব আমরা। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ অভিভাবকহীন হয়ে গেল’।
মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজের সুবাদে সবচেয়ে বেশি পরিচিত সৌমিত্র। লিজিয়ঁ অব অনার, দাদাসাহেব ফালকে, বঙ্গভূষণ, পদ্মভূষণ এবং জাতীয় স্তরে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ওঁর পরিবার, চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলী এবং অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই’।
আপনার মন্তব্য দিন