ছায়াছন্দ প্রতিবেদক : কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয় তারকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে পেয়েছেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশী ছবিতে অভিনয় করেছেন। মুম্বাইয়ের হিন্দী ছবিতেও নায়িকা হয়েছেন। সম্প্রতি প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না’র প্রযোজনা সংস্থা কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র প্রযোজিত ‘জ্যাম’ ছবির শুটিং করতে ঢাকায় এসেছিলেন ঋতুপর্ণা। তখন কথা বলেছেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
‘জ্যাম’ ছবিতে আপনাকে আইনজীবির সাজে দেখা গেলেও চরিত্র সম্পর্কে পুরো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না, কেন ?
সবকিছু আগে থেকে রিভিল করে দিলে দর্শকদের কিউরিসিটি থাকে না। আমরা মানুষকে যেন কিউরিয়াস করতে পারি, যেন একটু সাসপেন্স দিতে পারি, নতুন কিছু এড করতে পারি – সেটা হচ্ছে সিনেমার ফ্লেভার। যদি আমরা এগুলো বজায় রাখতে পারি তাহলে সিনেমার ভ্যালু তৈরী হবে। সেজন্যই কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রয়াত মান্না’র সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে অনেক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছিলেন। এখন তারই প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে কাজ করছেন। অনুভূতিটা কেমন ?
মান্না ভাই’র চলে যাওয়াটা আমার কাছে একটা ব্যাথার জায়গা। তার পরিবারের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিলো। আছে, থাকবেও আজীবন। মান্না ভাই আর আমি প্রচুর ব্যবসাসফল ছবি করেছি, সেটা যৌথ প্রযোজনা হোক কিংবা এখানকার ছবিই হোক। আমার মনে আছে তিনি অনেক ছবিতে আমাকে রিকমান্ড করে দিতেন। তাকে সম্মান করি। কারণ তিনি শুধু বড় এক্টরই ছিলেন না, ইন্ডাস্ট্রিতে তার অনেক অবদান। শুধু নিজেরটা দেখেননি, অনেক দিয়ে গেছেন। প্রচুর বাণিজ্য হয়েছে তার সিনেমা থেকে। তিনি সিনেমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমি চাইবো তার কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র থেকে যে ছবিটা হচ্ছে তা ভালো হোক। আমিও যেনো অবদান রাখতে পারি।
শোনা যাচ্ছে, কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্রের পরবর্তী ছবিতেও আপনি থাকছেন। এই বিষয়ে কী বলবেন?
আমি যদি থাকি, তাহলে শেলী আপার সাথে ভালো একটা প্রজেক্ট করবো। সিনেমার বিষয়বস্তু চয়েজ করা খুব ইমপর্টেন্ট এই মুহূর্তে। ইন্ডিয়ার কথা আমি বলতে পারি, আমাদের সারাক্ষণ ভাবতে হয় যে আমরা দর্শককে নতুন কী দেব। আপনি যদি আমার গত কয়েক বছরের সিনেমা দেখেন তাহলে দেখবেন আমি নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি।
প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায় – একসময় কমার্শিয়াল ছবিতে নিয়মিত কাজ করেছেন, এখন দেখা যাচ্ছে গল্পপ্রধান ছবিতে বেশি কাজ করা হচ্ছে। এটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আমার মনে হয় যেকোন শিল্পী তাদের জীবনের গ্রাফকে একেকরকমভাবে দেখে। আপনি বড় বড় তারকা, যেমন শাহরুখ খান, আমির খান, হৃতিক রোশনকে দেখেন, তারা কমার্শিয়াল সিনেমার পাশাপাশি ভিন্ন কিছু ক্যারিয়ারে এড করার চেষ্টা করছে। আমি কখনোই সিনেমার কমার্শিয়াল ভ্যালুকে উপেক্ষা করিনি। এই ভ্যালুর সাথে যদি আমরা কিছু আর্টের যোগ করতে পারি, তাহলে সেটি ডিফারেন্ট সিনেমা হবে। ‘একটি সিনেমার গল্প’ করলাম, যেটি পুরোপুরি কমার্শিয়াল। কলকাতায় ‘আহারে’ করলাম, যেটি সেমি কমার্শিয়াল। ‘বিদ্রোহিনী’ করছি যেটায় পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি ব্যালেন্স মেইনটেন করতে চাচ্ছি, যাতে দর্শক আমাকে সবরকম চরিত্রে পেতে পারেন। আমি মুম্বাইতেও কাজ করছি। আমি পুরো সার্কেলটাকে এক্সপ্লোর করতে চাই। এক্সপেরিয়েন্স এবং এক্সপেরিমেন্ট দুটোর মাঝেই থাকতে চাই। সিনেমা আমার কাছে ভালোবাসার জায়গা। সিনেমা ছাড়া আমি কিছুই ভাবি না।
প্রযোজনায় এসেছেন, ‘আহারে’ করলেন। ছবিটি কিছু পুরস্কার জিতলো, দর্শক নন্দিত হলো। সামনে আর কী ছবি নিয়ে আসছেন নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে ?
আমরা ভাবছি, ‘আহারে’ সাফল্য পেয়েছে। প্রচুর বড় বড় ফেস্টিভ্যালে গেছে। সম্প্রতি জাগরন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে। অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। ‘আহারে’র সিক্যুয়েল নিয়েও ভাবছি।
আপনার প্রথম প্রযোজিত ছবির সাথেও জড়িয়ে রইলো বাংলাদেশের নাম – এটা কীভাবে দেখছেন ?
আমি খুব হ্যাপি যে বাংলাদেশের নায়ক (আরেফিন শুভ) আমাদের ছবিতে কাজ করেছে। এই ছবির মাধ্যমে কলকাতায় ওর এন্ট্রি হয়েছে।
আপনি আরেফিন শুভ’র সাথে ‘একটি সিনেমার গল্প’ করার পর ‘আহারে’, এখন করছেন ‘জ্যাম’ – বিষয়টা কাকতালীয়?
এটা শুভকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। কাকতালীয়ভাবে শুভ আর আমার কয়েকটি কাজ করা হয়েছে। হয়তো ওর সাথে ম্যাচিংটা ভালো হয়, দর্শকের ভালো লেগেছে আমাদেরকে। ‘একটি সিনেমার গল্প’তে সবাই ভালো লিখেছে আমাদের নিয়ে। আশা করি শুভ’র সঙ্গে আরো ভালো ভালো কাজ হবে।
সামনে আর কী কী ছবি আসছে আপনার ?
‘পার্সেল’ নামে একটি ছবি আসছে যার বিষয়টা খুবই ইন্টারেস্টিং। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে আমার হিন্দি ছবি ‘বাসুরি’ আসছে। ‘বাসুরি’ নিয়ে আমি এক্সাইটেড। আমার আরেকটি ছবি আসছে ‘গুড মর্নিং সানশাইন’, আসছে ‘লাইম এন্ড লাইট’। শিবপ্রসাদ – নন্দিতা’র ‘বেলাশুরু’ আসছে, ‘বেলাশেষ’র সিক্যুয়েল। সৃজিতের সাথে আমার একটি ছবি করার কথা আছে। আলমগীর ভাইয়ের সাথে ‘আমার লবঙ্গলতা’ আসছে, সুচিত্রা সেনের পর আবার ‘দত্তা’ হচ্ছে; ওটা আসছে। বেশকিছু ছবি অন দ্য ওয়ে। আশা করি বাংলাদেশে আরো ভালো কিছু কাজ আপনাদের উপহার দিতে পারবো।
নব্বই দশকের ‘স্বামী কেন আসামী’ থেকে আজকের ‘জ্যাম’ – বাংলাদেশে আপনার এই সময়টুকু কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমার মনে হয় এই জার্নিটা অবিস্মরণীয়। আমি নিজেকে খুব লাকী মনে করি, আমি এই বড় একটা জার্নির মধ্য দিয়ে যেতে পারলাম। বহু মানুষ এখানে আসে স্বপ্ন নিয়ে। সবার স্বপ্ন সফল হয় না। আমার সব স্বপ্ন সফল হয়েছে তা বলতে পারবো না। কিন্তু আমার এই ক্যারিয়ার জার্নি নিয়ে আমি খুব গর্বিত। আমার জীবনের রিগ্রেটস অনেক কম, পাওয়া অনেক বেশী। আমি যে সম্মান পেয়েছি, কাজের ক্ষেত্র পেয়েছি সেটা খুবই ভালো লাগার। তাছাড়া বাংলাদেশ আমার খুব প্রিয় জায়গা। আমি এখানে আসতে, কাজ করতে ভালোবাসি। বাংলাদেশ আমাকে খুব আদর – আপ্যায়ন করেছে – এটা আনন্দের ব্যাপার। বাংলাদেশকে আমার বাড়ির মতোই মনে হয়। এখানকার দর্শক, শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, সাংবাদিক – সবাই আমাকে ভালোবাসা আর সম্মান দিয়েছে। আমি অনেক পেয়েছি আপনাদের কাছ থেকে। বার বার যেনো পাই, তাই ছুটে আসি আপনাদের কাছে।
আপনার মন্তব্য দিন