মোহাম্মদ তারেক : ভালো কাজ হচ্ছে বলেই দর্শক দেখছে। কাজ বেশি হলে খারাপ কাজের সংখ্যা বাড়বে – এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কথাগুলো বলেছেন দর্শকনন্দিত টেলিভিশন অভিনেত্রী রুমানা রশীদ ঈশিতা। ঈদে তার অভিনীত দুটি টেলিছবি ছোটপর্দায় প্রচারিত হয়েছে। অসাধারণ মনের এই দুটি টেলিছবিতে চরিত্রানুগ দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সাবেক নতুন কুঁড়ি তারকা ঈশিতা। এই দুটি টেলিছবি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ঈদ কেমন কেটেছে ?
ঈদ আলহামদুলিল্লাহ ভালো গেল। এরকম একটা দুর্যোগের সময় পরিবারের সবাই সুস্থ আছি – এটাই বড় পাওয়া।
ঈদের দুটি কাজ দিয়ে দর্শকের সাড়া তো দারুন পাচ্ছেন – এই প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য কী ?
খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশফাক নিপুণের ‘ইতি, মা’ নিয়ে বেশ সাড়া পাচ্ছি। মাহমুদুর রহমান হিমির ‘কেন’ – তে চরিত্রটা ছোট ছিলো। ওখানে ফ্ল্যাশব্যাক বেশি ছিলো বলে বর্তমানটা কম ছিলো। তবে দুটোতেই দর্শকের এমন ইতিবাচক সাড়ায় একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে আমার কাছে সত্যিই উপভোগ্য।
এই কাজ দুটির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
এই কাজ দুটি লকডাউনের আগে করা। দুই নির্মাতাই প্রচুর হোমওয়ার্ক করে, প্রস্তুতি নিয়ে শুটিংয়ে গেছেন। ‘কেন’ এবং ‘ইতি, মা’ কোনোটিতেই নূন্যতম কনফিউশান, মিসম্যানেজমেন্ট পাইনি। ডিওপি থেকে শুরু করে পরিচালক সকলেই কাজের পরিস্কার ধারণা নিয়ে শুটিংয়ে গেছেন। দুই টেলিছবিতেই আমার সঙ্গে আফরান নিশো ছিলো। ও অসম্ভব ভালো অভিনয় করে। সহযোগিতা করে। মজার ব্যাপার হলো দুটিতেই আমার এয়ারপোর্টে শুটিং ছিলো। এয়ারপোর্টে শুটিং মানেই অনেক নিয়ম মানতে হয়। কিন্তু শুটিংয়ের সময় কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি।
ঈদের নাটক দেখেছেন ?
আমি গেলো ৬ আগস্ট থেকে নাটক দেখা শুরু করেছি। আমার দুটি কাজ আর আশফাক নিপুণের ‘ভিকটিম’ ও ‘অযান্ত্রিক’ দেখেছি। আমাদের মতো মানুষদের পক্ষে টেলিভিশনের সামনে বসে নাটক দেখা খুব কঠিন। ইউটিউবে এলে নাটকগুলো দেখছি। সবগুলো দেখার ইচ্ছে আছে।
চলতি সময়ে নাটকের মান কেমন দেখছেন ?
এই প্রসঙ্গে আমি বলবো – কাজ যদি বেশি হয়, তাহলে ভালো কাজের পাশাপাশি খারাপ কাজের সংখ্যাও বাড়বে। দশটা কাজের মধ্যে তিনটা বাজে কাজ হতে পারে। সাতটা ভালো কাজ হতে পারে। একশোটা কাজ হলে তিরিশটা কাজ খারাপ হতেই পারে। আমি মনে করি ভালো কাজ অবশ্যই হচ্ছে। তা না হলে দর্শক আমাদের কাজ দেখতেন না। আমাদের সামনে এত অপশান। আমরা তো একটা চ্যানেল দেখতে বাধ্য নই। তাই ভালো কাজ হচ্ছে বলেই দর্শক দেখছে।
ওয়েব কন্টেন্ট নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী ?
ওয়েব কন্টেন্ট বা ওয়েব সিরিজ নিয়ে অনেক কথা বলার আগে কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শুরুতে যদি ধরে নেই আমরা নেটফ্লিক্সের মতো সাফল্য পাবো, তাহলে তো হবে না। যেসব দেশে নেটফ্লিক্স সাফল্য পেয়েছে তাদের দেশের কতজন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে – এটা কিন্তু ভেবে দেখতে হবে। আমাদের দেশে কয়জন মানুষের কাছে ইন্টারনেট আছে ? যদি সবার কাছেই ইন্টারনেট থাকতো, তাহলে অনলাইনে ক্লাস করতে বাচ্চাদের এত অসুবিধা হচ্ছে কেন ? আমরা যখন ঘরে ঘরে ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবো তখন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম নিয়ে ভালো কিছু আশা করতে পারবো। এখন আমাদের এসব নিয়ে কথা বলা অনুচিত। কারণ আমাদের প্রযুক্তি এত উন্নত নয়।
গানের চর্চাটা নিয়মিত করছেন তো ?
গানের চর্চা চলছে মোটামুটি। লকডাউনের প্রথমদিকে গান করিনি একদমই। সবার মতো পুরো পৃথিবী নিয়ে মন খারাপ ছিলো। বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় যখন হাঁটতেও পারছিলাম না, তখন মন ভিষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমরা কীভাবে জীবন পার করেছি আর ওরা কীভাবে আছে। এখন এটা নিউ নরমালে পরিণত হয়েছে। মাঝখানে কয়েক মাস গানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিলো না। ভাবছি আবার শুরু করবো। এভাবেই জীবন ধারণ করতে হবে। নতুন গানের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।
এই চলমান করোনাকাল কেমন কাটছে ?
আমার সময় খুব ভালো কাটছে। এমনিতে কাজ না থাকলে আমি বাইরে যাই না। আমি ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ। করোনার জন্য আমার আলাদা কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে বাচ্চাদের স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করি।
আপনার ভক্ত আর দর্শকদের জন্য কী বার্তা দিতে চান ?
যখন করোনা যাবে, তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবো – এই চিন্তাটা বাদ দিতে হবে। কারণ করোনা কখন যাবে কেউই বলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতেই আমাদের যে পরিকল্পনা ছিলো, তা বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি।
আপনার মন্তব্য দিন