তুষার আদিত্য : সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে নানা রোগ – ব্যাধি জনিত অপারেশন আর বার্ধক্যজনিত কারণে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। সব ক্লান্তি মাড়িয়ে অবশেষে মাটির বিছানায় চির শান্তির ঘুম ঘুমালেন তিনি। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের অসাধারণ অভিনয় শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান। ওই দিন সকালে ঘুমের ঘোরেই মৃত্যুবরণ হয় একুশে পদক পাওয়া এই গুণী অভিনেতার।
জানা যায়, তার ইচ্ছে অনুযায়ী নারিন্দা পীর সাহেব কর্তৃক তার লাশ গোছল করানো হয়। অতঃপর পীর বাড়ি জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর সূত্রাপুর বাজার জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। জাদরেল এই অভিনেতার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানা যায়, বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ধদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ তার চিকিৎসা করানো হয় পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে। ১৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সকালে তার কন্যা কোয়েল আহমেদ জানিয়েছিলেন, তার বাবার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাকে বাসায় আনা হয়েছে। তাই পরিবারের সবার মনে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু মাত্র এক রাতের ব্যবধানেই ঘুমের ঘোরেই এই কিংবদন্তি সবাইকে কাঁদিয়ে চলেন গেলেন জাগতিক সব কিছুর উর্ধ্বে।
জানা যায়, এটিএম শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, নোয়াখালীর দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকর, সংলাপ রচয়িতা এবং গল্পকার। আজীবন সম্মাননা সহ পেয়েছেন পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।
তার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে, পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে। তিনি প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটিএম শামসুজ্জামান শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন।
জানা যায়, অভিনয় জীবনের শুরু দিকে তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আবির্ভূত হন ১৯৬৫ সালের দিকে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি।
খল অভিনেতা হিসেবে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’। তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’।
আপনার মন্তব্য দিন